সূরা বাকারাহ এর ৯৩ নং আয়াতে আল্লাহ্ বনী ইসরাইলদের ব্যাপারে বলেছেন,
“আর যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিলাম এবং তূর পর্বতকে তোমাদের উপর তুলে ধরলাম যে, শক্ত করে ধর আমি যা তোমাদের দিয়েছি আর শোন। তারা বলল, আমরা শুনেছি আর অমান্য করেছি। কুফরের কারনে তাদের অন্তরে বাছুরপ্রীতি পান করানো হয়েছিলো। বলে দিন, তোমরা বিশ্বাসী হলে তোমাদের সে বিশ্বাস মন্দ বিষয়াদি শিক্ষা দেয়।”
মুসা(আলাইহিস সালাম) যখন আল্লাহর সাথে কথা বলার জন্য সিনাই পর্বতে গেলেন, বনী ইসরাইল তখন চঞ্চল ও অস্থির হয়ে পড়ল। তারা আল্লাহর পাশাপাশি ইবাদাতের জন্য অন্য দেবতা খোঁজা শুরু করল। এরইমধ্যে তারা সোনার তৈরি একটি কৃত্রিম বাছুরের ইবাদাত শুরু করে দিল। এই বাছুরটিকে পূজা করার প্রতি তাদের প্রবল অনুরাগকে ব্যাখ্যা করতে আল্লাহ ‘উশরিবু ‘ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এর অর্থ হচ্ছে কোনো কিছু পান করা, শুষে নেওয়া। অর্থাৎ তাদের এই ভ্রষ্টতা ও বিপথগামীতাকে আল্লাহ তরল কিছু পান করা বা শুষে নেওয়ার সাথে তুলনা করেছেন।
কুরআন এবং সুন্নাহর অন্যান্য জায়গাতে ইলম এবং হিদায়াহ গ্রহণ করার বিষয়টিকেও এই পান করা বা শুষে নেওয়ার উপমাটি দেওয়া হয়েছে। আল-বুখারি এবং মুসলিমে একটি হাদীস বর্ণিত আছে, যেখানে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে যে হিদায়াহ ও ইলম দিয়ে পাঠিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত হল যমীনের উপর পতিত প্রবল বৃষ্টির ন্যায়… আল্লাহ্ তা’আলা তা দিয়ে মানুষের উপকার করেন। মানুষ তা থেকে পান করে তৃষ্ণা মেটায়” (সহিহ বুখারী :: খন্ড ১ :: অধ্যায় ৩ :: হাদিস ৭৬)।বুখারি ও মুসলিমের অন্য একটি হাদীসে এসেছে, ‘আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। (স্বপ্নে) আমাকে একটি দুধের পাত্র দেওয়া হল। আমি তা থেকে পান করতে লাগলাম। অবশেষে তা আমার নখের নিচ থেকে বেরিয়ে আসা শুরু করলে অবশিষ্ট দুধসহ পাত্রটি ‘উমার ইবনুল খাত্তাবকে দিয়ে দিলাম।’ সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? তিনি(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “এই দুধ হচ্ছে ইলম” (সহিহ মুসলিম :: বই ৩১ :: হাদিস ৫৮৮৮ এবং সহিহ বুখারী :: খন্ড ৫ :: অধ্যায় ৫৭ :: হাদিস ৩০)।
ইসরা’ এবং মি’রাজ এর হাদীসেও এমনটি আছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “এরপর আমার সম্মুখে দুটি পাত্র পেশ করা হয়, এর একটি দুধের ও অপরটি মদের। আমাকে বলা হলো, এর মধ্যে যেটা আপনার ইচ্ছা সেটা গ্রহণ করুন। আমি দুধ গ্রহণ করে তা পান করলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে বললেন: আপনাকে ফিতরাতেরই হিদায়াত করা হয়েছে। আপনি যদি মদ গ্রহণ করতেন, তবে আপনার উম্মাত গোমরাহ হয়ে যেত” (সহিহ মুসলিম :: খন্ড ১ :: হাদিস ৩২২)।
পানীয় দ্বারা যেমন দেহের তৃষ্ণা মেটে, তেমনি হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটে সঠিক জ্ঞান ও পথনির্দেশিকার দ্বারা। তৃষ্ণা পেলে মানুষ শুধু স্বাস্থ্যকর ও বিশুদ্ধ জিনিস পান করে। এক গ্লাস পানিতে মাত্র এক ফোঁটা কালি পড়লেও কেউ সেই দূষিত পানি পান করতে চাইবে না। তেমনি হৃদয় ও মনের তৃষ্ণা মেটাতে হলে প্রয়োজন বিশুদ্ধ ও পবিত্র উৎস থেকে উৎসরিত জ্ঞান এবং পথনির্দেশিকা। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবেই সাহাবাদের বিস্ময়কর প্রজন্মকে বিশুদ্ধ উৎস এবং ঐশ্বরিক পথনির্দেশিকার ছাঁচে গড়ে তোলেন। যার ফলে তাদের হৃদয় এবং মনন এমনভাবে গড়ে ওঠে, যা বিচক্ষণতা এবং জ্ঞানে অতুলনীয়। সাহাবাদেরকে শুধু কুরআন এবং সুন্নাহর আদর্শে গড়ে তোলার এই প্রক্রিয়া অন্য কোনো উৎসের অভাব থেকে জন্ম নেয় নি, কিংবা তা ওয়াহী ব্যতীত বিকল্প কোনো দিকনির্দেশনা থেকেও আসে নি। বরং এই প্রচেষ্টা সুচিন্তিত এবং ওয়াহী দ্বারা সুপরিকল্পিত। সায়্যিদ কুতুব (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
‘মহাগ্রন্থ আল কুরআন থেকেই সাহাবায়ে কেরাম (রা? তাদের প্রয়োজনীয় পথনির্দেশ গ্রহণ করতেন। তারা নিজেদেরকে সম্পূর্ণরুপে কুরআনের ছাঁচে গড়ে তুলেছিলেন। কথা হলো-কেন তারা কুরআনকে এভাবে গ্রহণ করতেন? অন্য কোনো সভ্যতা, সাহিত্য, শিক্ষাকেন্দ্র, বিদ্যাপীঠ ইত্যাদি না থাকার কারণে বাধ্য হয়েই কি তারা কুরআনকে এমন পরমভাবে গ্রহণ করেছিলেন? কিছুতেই নয়, কস্মিনকালেও এটা সত্য নয়।
প্রকৃত ইতিহাস ঘাঁটলে দেখতে পাবো, তৎকালীন রোমান সভ্যতা ও রোমান আইনশাস্ত্রকে আজও ইউরোপে সভ্যতার আদি মডেল হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সে যুগের গ্রীক যুক্তিবিদ্যা, গ্রীক দর্শন, শিল্পসহ সাহিত্যকে আজও পাশ্চাত্য উন্নত চিন্তাধারার অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পারস্য সভ্যতা, তাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সাহিত্য, ধর্ম, দর্শন ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাও সে যুগে ছিলো অত্যন্ত সুগঠিত ও ঐতিহ্যবাহী হিসেবে সুপরিচিত। আরবের কাছে ও দূরে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে আরও অনেক সভ্যতা তখন বিদ্যমান ছিলো; তাতে চীন ও ভারতের কথা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। আরবের উত্তরে ছিল রোমান সভ্যতার কেন্দ্রভূমি, আর দক্ষিণে ছিল পারস্য সভ্যতা। সুতরাং একজন সুস্থ চিন্তার মানুষ একথা বলতে পারে না যে, সাহিত্য, সভ্যতা ও সুগঠিত কোনো ব্যবস্থার অনুপস্থিতির কারণে সে যুগের মুসলমানরা কুরআনকে তাদের একমাত্র জীবন বিধান হিসেবে গ্রহণ করেন। বরং একটি সুপরিকল্পিত প্রক্রিয়ায় এই প্রজন্মটি সুনির্দিষ্টভাবে শুধুমাত্র কুরআন এবং সুন্নাহ্‌ থেকে নিজেদের জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটান যার ফলে ইতিহাসে তারা এক অনন্য স্থান লাভ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে বিশুদ্ধ জ্ঞানের এই সরোবরের সাথে অন্য উৎসের মিশ্রণ ঘটিয়ে ফেলা হয়…’
সাহাবাদের জন্য কুরআন ছিল এক আলো যা দ্বারা তাঁরা বিশ্বকে চিনতে, জানতে এবং বুঝতে পারতেন। কুরআনকে তাঁরা বুঝতেন কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই। অন্য কোনো মতবাদ, ওয়ার্ল্ডভিউ বা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কুরআনকে বোঝা বা ব্যাখ্যা করার কোনো প্রয়োজনই হয়নি, বরং এ ধরনের প্রয়াসকে বাতিল বলে বিবেচনা করা হয়। রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেশ কঠোর ভাবে নিশ্চিত করেছিলেন যেন সাহাবারা কুরআনকে কুরআনের মত করেই বোঝেন, অন্য কোনো আদর্শ বা মতবাদের সংমিশ্রণ যেন তাঁদের হৃদয়-মনকে কলুষিত করতে না পারে। সাহাবাদের যুগে এই বিশুদ্ধতা সম্পূর্ণ বজায় রাখা হয়েছিল, তাই উম্মাহকে সঠিক পথে পরিচালিত করা সম্ভব হয়েছিল। তারা ছিল ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী। সাহাবাদের সময়ের শেষদিকে তাবিই’নদের যুগে এসে তাঁদের জ্ঞানের বিশুদ্ধ উৎসগুলো আর অনন্য থাকেনি। যার ফলে ঐ সময় কাদেরিয়াদের আবির্ভাব ঘটেছিল, বসরায় আবির্ভাব হয়েছিল মু’তাযিলাদের, খুরাসানে আবির্ভাব হয়েছিল জাহ্‌মিয়াহদের এবং এমন আরো অনেক সম্প্রদায়। মুসলিমদের মধ্যে এই ধরনের বিজাতীয় বিশ্বাস ও মনগড়া মতবাদের উদ্ভব ও বিস্তার লাভের কারণ হল ইসলামকে ভিনদেশী মতবাদ ও দর্শনের আলোকে বুঝতে চেষ্টা করা। আজ গ্রীক ও পার্সিয়ানদের সভ্যতা, সাহিত্য আর দর্শনের দিকে খেয়াল করলে আমাদের বোধগম্য হবে যে এদের কিছু বিশ্বাস ও চিন্তা চেতনার সাথে ইসলামের সংমিশ্রণে এই সকল ভ্রান্ত মতবাদ ও জামাতের উদ্ভব হওয়া শুরু হয়েছে তাবেঈনদের যুগ থেকে। কুরআনকে কুরআনের মতো করে বুঝতে হবে। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দৃষ্টিতে কুরআনকে বুঝতে হবে। পূর্ববর্তী সালাফগণ কুরআনের বিধি বিধান যেভাবে দেখেছেন ও মেনেছেন সেভাবে আমাদেরকেও বুঝতে হবে। অথচ কুরআনকে আজ বিচার করা হচ্ছে পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গিতে, তাদের তথাকথিত ‘’সভ্য’’ চোখে তারা ঠিক করে দিচ্ছে কুরআনের কতটুকু মানা যাবে আর কতটুকু ছেড়ে দিতে হবে। আজকের আরবরা পশ্চিমা সভ্যতা দেখে বিমুগ্ধ, অথচ সভ্যতার অর্থ এবং প্রকৃত জ্ঞানের মালিক ছিল তারাই যখন তারা কুরআন এবং সুন্নাহর অনুসরণ করত। বিশুদ্ধ ও পবিত্র সেই এক গ্লাস পানিকে এখন দূষিত ও অপবিত্র করা হচ্ছে যা হৃদয় ও মননের জন্য খুবই বিষাক্ত ও ক্ষতিকর। ইসলামের সাথে বিজাতীয় মতাদর্শ মিশে দূষিত হওয়ার যে ঝোঁক সৃষ্টি হয়েছিল ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ) তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন এবং ইসলামের বিশুদ্ধতাকে যথাযথভাবে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। আর শুধু একারণেই আল মু’তাসিমের হাতে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বালের (রহিমাহুল্লাহ) মতো বীরদের জেল-জুলুম ও নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। সে সময়ে ইসলামের বিশুদ্ধ উৎসের ভেতরে বিজাতীয় মতবাদ ঢুকে পড়ার কারণে ইসলামী আক্বীদাহ্‌র কিছু বিষয় দূষিত হয়েছিল, যেমন আল্লাহর অবস্থান এবং গুণাবলী সংক্রান্ত বিষয়াবলী।
কিন্তু বর্তমানে, এই দূষণ এমন সব বিষয়তেও ছড়িয়ে পড়েছে যা আগে দেখা যায়নি। উদাহরণস্বরূপ, আল মু’তাসিম মু’তাযিলাহ মতবাদের বিরোধিতার কারণে ইমাম আহমাদকে বেত্রাঘাত করেছিলেন ঠিকই কিন্তু পাশাপাশি তিনি কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ অব্যাহত রেখেছিলেন। কেবল একজন অত্যাচারিত মুসলিমকে উদ্ধার করার জন্য তিনি অভিযান প্রেরণ করেন এমন ঘটনাও ঘটে। যদিও তার আক্বীদাহ্‌ তাত্ত্বিক দিক দিয়ে দূষিত হয়ে পড়েছিল, কিন্তু বিশ্বের প্রতি তার যে সার্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি (worldview) তা ছিল অবিকল কুরআনের শিক্ষার অনুরূপ। মুসলিমদের সম্মান ও গৌরব ধরে রাখতে তিনি তখনও দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন। তার মধ্যে তখনও নিঃস্বার্থতা এবং মুসলিমদের প্রতি বিশ্বস্ততা অটুট ছিল। তিনি ইসলাম এবং কুফরের দ্বন্দ্বকে অনুধাবন করতে তখনও ভুলে যাননি। মুসলিমদেরকে যেকোনো মূল্যে রক্ষা করার ব্যাপারে তার মধ্যে তখনও প্রবল ঈর্ষা কাজ করত। শত্রুর আচঁড় থেকে মুসলিমদের রক্ষা করার ব্যাপারে তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা। তিনি বিশ্বকে দেখতেন এবং বিচার করতেন প্রথম যুগের মুসলিম এবং সালাফগণের দৃষ্টিভঙ্গিতে। আর এই দৃষ্টিভঙ্গি তাদের মধ্যে জন্ম নিয়েছিল কুরআনের সূরা আলে-ইমরান, আন-নিসা, আল-আনফাল এবং আত-তাওবার স্পষ্ট এবং দ্ব্যর্থহীন আয়াতগুলো সঠিকভাবে আত্মস্থ করার মাধ্যমে। কুরআনের বিষয়বস্তু আল মু’তাসিমের মত মু’তাযিলাহ শাসকও অত্যন্ত পরিষ্কার ভাবে বুঝেছিলেন, আর আজ কুরআনের অর্থ বিকৃত হচ্ছে শুধুমাত্র পশ্চিমা দৃষ্টিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ কুরআনকে বিবেচনা করার জন্য। বিজাতীয় পশ্চিমা ছাঁকুনি দ্বারা কুরআনের জ্ঞানের বারিধারাকে ছেঁকে ফেলার কারণে আজকে পশ্চিমা মুসলিমদের মধ্য থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সেই উপলব্ধিগুলো যা মু’তাসিম মু’তাযিলাহ হয়েও অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। ‘আল ওয়ালা ওয়াল বারা’ অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য ভালবাসা আর শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করা বিষয়টি সাহাবারা হৃদয়ঙ্গম করে অভ্যাসে পরিণত করেছিলেন। আর আজ সাহাবাদের সেই আদর্শ পুঁজিবাদী মানসিকতার আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা চেতনা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। এই পুঁজিবাদী ধ্যান ধারণা এই সমাজকে এমন ভাবে দূষিত করেছে যে কিছু সংখ্যক “আলেম’’ যারা কিনা মু’তাসিমের চেয়েও দ্বীনের জ্ঞান বেশি রাখেন, তারাও কুরআনের পরিভাষা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত মুসলিমদের “মুজাহিদ” সম্বোধন না করে পশ্চিমা মিডিয়ার পরিভাষা “জঙ্গি” ব্যবহার করেন। তাই বলা যায় যে কুরআনের সঠিক জ্ঞান, পথ নির্দেশ, অভিমত আজ দূষিত হচ্ছে পশ্চিমা ঔপনিবেশিক দৃষ্টিতে কুরআনকে বিবেচনা করার জন্য।
এখন আমাদের দায়িত্ব এই যে, আত্মার প্রশান্তির জন্য একটি বিশুদ্ধ উৎস খুঁজে বের করা। গণিত, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসা শাস্ত্র, কৃষি, প্রযুক্তিবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়াবলীর ক্ষেত্রে যেকোনো উৎস থেকে নিরাপদে জ্ঞান আহরণ করা যায়। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস, জীবন ব্যবস্থা, সাংসারিক ও বৈষয়িক চিন্তা চেতনা–যা আল্লাহ্ আমাদের উপর কুরআনে ধার্য ও উল্লেখ করে দিয়েছেন–তা আমাদের গ্রহণ করতে হবে সেই বিশুদ্ধ উৎস থেকেই। আমাদেরকে তা গ্রহণ করতে হবে কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী,পশ্চিমা অভিরুচি মোতাবেক নয়। আমাদের মনকে এই দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে হবে।
যদি বনী ইসরাইলীরা মুসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রকৃত শিক্ষাতেই অটল থাকত, তাহলে তারা অন্য মতের সাথে নিজেদের মতামতের সংমিশ্রণ করে মূর্তিপূজায় লিপ্ত হত না; সৃষ্টিকর্তার স্থলে স্বর্ণের তৈরি বাছুরের ইবাদাতও করতো না।
তারিক মেহান্না,
প্লাইমাউথ কারেকশনাল ফ্যাসিলিটি,
আইসলেশন ইউনিট, সেল #১০৮।